Benefits of Chia Seeds in Bangla: চিয়া বীজ (সালভিয়া হিস্পানিকা), যা সালবা চিয়া বা মেক্সিকান চিয়া নামেও পরিচিত, পুদিনা পরিবারের একটি খাদ্যযোগ্য বীজ। প্রাচীন আজটেক ও মধ্য আমেরিকার সংস্কৃতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্যশস্য ছিল এবং এর ঔষধি গুণের জন্যও প্রসিদ্ধি ছিল।
বর্তমানে গুয়াতেমালা, মেক্সিকো, পেরু, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া এবং আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে চিয়া বীজ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর এই বীজগুলি আধুনিক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাদ্যতালিকায় একটি অত্যন্ত প্রিয় উপাদান হিসাবে স্বীকৃত।
চিয়া বীজের পুষ্টিগুণ
চিয়া বীজ বিভিন্ন ধরনের অত্যাবশ্যক খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে:
- ক্যালসিয়াম
- ম্যাঙ্গানিজ
- ম্যাগনেশিয়াম
- সেলেনিয়াম
- তামা
- আয়রন
- ফসফরাস
এছাড়াও, চিয়া বীজ আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ) নামক ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি অসাধারণ উৎস। এএলএ ওমেগা-6 এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিডের অনুপাতকে কমিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই অনুপাত কম থাকলে হৃদরোগ, ক্যান্সার এবং প্রদাহজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
দু-চামচ চিয়া বীজের পুষ্টি উপাদান
1 আউন্স (28.35 গ্রাম) চিয়া বীজে নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান রয়েছে:
- ক্যালোরি: 138
- প্রোটিন: 4.7 গ্রাম
- ফ্যাট: 8.7 গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: 12 গ্রাম
- ফাইবার: 9.8 গ্রাম
- শর্করা: 0 গ্রাম
চিয়া বীজের স্বাস্থ্য উপকারিতা
চিয়া বীজে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এই উপস্থিত পুষ্টি উপাদানগুলি স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকে উল্লেখযোগ্য উপকারিতা প্রদান করে।
1. ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক
চিয়া বীজে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি শরীরে ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। ফ্রি র্যাডিক্যাল অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং কোষ ক্ষতির কারণ হয়। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ হৃদরোগ, মানসিক ক্ষমতা হ্রাস এবং বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সম্পর্কিত স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলির মধ্যে রয়েছে:
- ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড
- ক্যাফেইক অ্যাসিড
- কেম্পফেরল
- কুয়েরসেটিন
2. হৃদয়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি
চিয়া বীজে কুয়েরসেটিন নামক একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হৃদরোগ সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও, উচ্চ পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতি রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের সম্ভাবনাও হ্রাস করে।
3. রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে
চিয়া বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে ফাইবার ইনসুলিন প্রতিরোধ কমাতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা উন্নত করতে সাহায্য করে, যা মেটাবলিক সিন্ড্রোম এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়।
4. প্রদাহ কমানোয় সহায়ক
দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের মতো স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে। চিয়া বীজে উপস্থিত ক্যাফেইক অ্যাসিড শরীরের প্রদাহ দমনে সাহায্য করে। নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে প্রদাহকারী সূচকগুলি হ্রাস করতে পারে, যা প্রায়ই প্রদাহজনিত রোগের উপস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।
5. ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
এক আউন্স চিয়া বীজে আপনার দৈনিক প্রয়োজনীয় ফাইবারের 35% থাকে। বীজে উপস্থিত দ্রবণীয় ফাইবার পেটে জল শোষণ করে ফুলে ওঠে। ফলে চিয়া বীজ দীর্ঘক্ষণ পেট ভরার অনুভূতি দেয় এবং সুস্থ ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
6. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি
চিয়া বীজ হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী কারণ এতে ম্যাগনেশিয়াম এবং ফসফরাসসহ বেশ কয়েকটি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এক আউন্স চিয়া বীজে দৈনিক ক্যালসিয়ামের প্রয়োজনীয়তার 14% পাওয়া যায়, যা সুস্থ হাড়, পেশি এবং স্নায়ু কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। প্রতি গ্রাম তুলনা করলে চিয়া বীজে দুগ্ধজাত দ্রব্যের চেয়ে বেশি ক্যালসিয়াম থাকে।
7. ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি
একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজের নিষ্কাশে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন এফ রয়েছে, যা ত্বকের কার্যকারিতা ও হাইড্রেশন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে চিয়া বীজ বার্ধক্যজনিত কিছু এনজাইমের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে ত্বকের সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
চিয়া বীজ খাওয়ার অপকারিতা
চিয়া বীজের অসংখ্য উপকারিতা থাকলেও, অতিরিক্ত সেবন বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
1. পাকস্থলীজনিত সমস্যা
উচ্চ ফাইবারের উপস্থিতির কারণে অতিরিক্ত চিয়া বীজ ক্রোনস ডিজিজ-এর মতো প্রদাহজনক অন্ত্রের অবস্থাকে আরও খারাপ করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, এবং গ্যাসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।
2. ঔষধের সঙ্গে প্রতিক্রিয়া
চিয়া বীজ রক্তের শর্করা ও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। যদি আপনি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান, অতিরিক্ত চিয়া বীজ গ্রহণ রক্তের শর্করা ও রক্তচাপের মাত্রা হঠাৎ কমিয়ে দিতে পারে, যা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
3. অ্যালার্জি
যদিও বিরল, তবে কিছু ব্যক্তির চিয়া বীজে অ্যালার্জি হতে পারে। এর কারণে বমি, ডায়রিয়া এবং জিভে বা ঠোঁটে চুলকানি হতে পারে। তীব্র অ্যালার্জি অ্যানাফিল্যাক্সিসে পরিণত হতে পারে, যা একটি গুরুতর অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া এবং দ্রুত চিকিৎসা না করা হলে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
প্রতিদিন কতটুকু চিয়া বীজ খাওয়া উচিত?
চিয়া বীজের অতিরিক্ত সেবন কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, তাই শুরুতেই সামান্য পরিমাণ গ্রহণ করা উচিত। প্রথমে, এক চামচ চিয়া বীজ দিয়ে শুরু করুন। খাওয়ার আগে বীজগুলিকে অবশ্যই জলে ভিজিয়ে ফুলিয়ে নেবেন।
নিঃসন্দেহে চিয়া বীজ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ফ্রি র্যাডিক্যালের প্রতিকার ও রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে এর অবদান উল্লেখযোগ্য। তবে, আপনার যদি নির্দিষ্ট কিছু চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা থাকে বা নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন অ্যান্টিকোয়াগুলেন্টস বা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান, তাহলে ডায়েটে চিয়া বীজ যোগ করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
ডিসক্লেইমার: লেখায় দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। আপনার কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
লাইফস্টাইল সংক্রান্ত এরকম আরও খবর পড়তে হলে চোখ রাখুন সংবাদ ভূমি ইন্ডিয়া ওয়েবসাইটে।
Very informative. Keep it up
Bhalo lekha
অসাধারণ পোস্ট। সমৃদ্ধ হলাম।