World PCOS Day 2024 News in Bengali: পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস আজকাল তরুণীদের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে। এই হরমোন সংক্রান্ত সমস্যা মেয়েদের বন্ধ্যাত্বের একটি প্রধান কারণ। আগামী 1 সেপ্টেম্বর বিশ্ব পিসিওএস দিবস উপলক্ষে কিশোরীদের পিসিওএস সম্পর্কে বোঝা এবং তা পরিচালনা করার উপায় জানা গুরুত্বপূর্ণ। পিসিওএস ক্রনিক অ্যানোভুলেশন, অনিয়মিত মাসিক, হিরসুটিজম এবং ওজন বৃদ্ধি দ্বারা চিহ্নিত হয়। এই এন্ডোক্রাইন ব্যাধি সমস্যা বিশ্বব্যাপী 6-26% এবং ভারতে 3.7-22.5% মহিলাদের প্রভাবিত করে।
যদিও মানুষ আজ পিসিওএস এবং পিসিওডির সম্পর্কে অনেকটাই সচেতন, তবুও অনেকে এখনও এই সমস্যার গুরুতরতা বুঝতে পারেন না বা এর উপসর্গ সনাক্ত করতে পারেন না। যার ফলে এই সমস্যার নির্ণয় এবং চিকিৎসা দেরি করে হয়। স্বাস্থ্য সচেতন জীবনযাপনের মাধ্যমে নিজের শরীরকে বোঝা এবং পরিচালনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পিসিওএস এবং অ্যান্ড্রোজেনের ভূমিকা
বেঙ্গালুরুর মিলান ফার্টিলিটি সেন্টারের প্রজনন বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌপর্ণিকা এসএন এক সুপরিচিত নিউজ পোর্টালের সাক্ষাৎকারে ব্যাখ্যা করেছেন, “পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (পিসিওএস) নামক একটি হরমোনাল ব্যাধিতে, অ্যান্ড্রোজেনের অতিরিক্ত পরিমাণ উৎপাদিত হয়। অ্যান্ড্রোজেন হল এক ধরনের হরমোন যা পুরুষের বৈশিষ্ট্য এবং প্রজনন প্রক্রিয়াগুলির সাথে যুক্ত। নারীদের শরীরে এটি ক্ষুদ্র পরিমাণে উপস্থিত থাকে। এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে অসমান মাসিক চক্র, অস্বাভাবিক ডিম্বাণু নির্গমন এবং মাসিকের অনুপস্থিতি সবই হতে পারে।”
“অ্যানোভুলেশন বা ডিম্বাণু নির্গমনের অভাবের কারণে ডিম্বাশয়ে ক্ষুদ্র ফলিকুলার সিস্ট গঠন হতে পারে। তবে এই সিস্টের উপস্থিতিই পিসিওএস নির্ণয়ের একমাত্র উপায় নয়। পিসিওএস মহিলাদের বন্ধ্যতার একটি প্রধান কারণ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। এর লক্ষণগুলি সাধারণত যৌবনারম্ভের সময় শুরু হয়। কিন্তু অনেক সময় 20-21 বছরেও এর লক্ষণ প্রকাশ নাই হতে পারে এবং সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে।”
ডঃ সৌপর্ণিকা এসএন জানিয়েছেন, “পিসিওএস বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ প্রকাশ করে। এর মধ্যে রয়েছে অনিয়মিত মাসিক, অতিরিক্ত চুলের বৃদ্ধি (হিরসুটিজম), স্থায়ী ব্রণ, এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার ক্ষমতা হ্রাস। প্রায় 40% থেকে 80% প্রভাবিত তরুণী স্থূলতা অনুভব করেন। এছাড়া ঘাড়, বগল এবং কুঁচকির মতো এলাকায় ত্বকের কালো হয়ে যাওয়াও সাধারণ।”
“অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে চুল পাতলা হওয়া বা ঝড়ে যাওয়া এবং অনিয়মিত ডিম্বস্ফোটনের কারণে বন্ধ্যাত্ব। লক্ষণীয় উপসর্গ ছাড়াও পিসিওএস হওয়া সম্ভব, এবং কেউ কেউ গর্ভধারণের সমস্যা বা অজানা কারণে ওজন বৃদ্ধির সমস্যা মোকাবিলা করার সময়ই এই অবস্থার কথা জানতে পারে।”
কেন পিসিওএস হয়?
পিসিওএস হওয়ার সঠিক কারণ এখনও অজানা, তবে জিনগত কারণ, স্থূলতা এবং অন্যান্য বিষয় সম্ভবত এর পিছনে ভূমিকা রাখে। পিসিওএস এর সাথে যুক্ত উচ্চ অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ডিম্বাশয়ের কার্যকারিতা ব্যাহত করে এবং উচ্চ রক্ত শর্করা এবং ডায়াবেটিসের দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমনকি প্রদাহও পিসিওএস এর একটি উপসর্গ। যদিও এটি গর্ভধারণের জটিলতা যেমন জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস এবং অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, পিসিওএস এ আক্রান্ত বেশিরভাগ নারী সফল গর্ভধারণ অর্জন করতে পারেন।
পিসিওএস এর কার্যকরী চিকিৎসার জন্য দৈনন্দিন অভ্যাসের পরিচালনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
অনেকেই পিসিওএস এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি উপেক্ষা করেন, যার ফলে রোগটি বাড়তে থাকে। তাই কোনো লক্ষণ দেখা দিলেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া খুবই জরুরি। এতে করে সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় করা যায় এবং চিকিৎসা শুরু করা যায়। ডাক্তার সৌপর্ণিকা এস এন পিসিওএস নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলি হল:
- পিসিওএস প্রায়শই দৈনন্দিন অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে পরিচালিত হতে পারে, যেমন স্বাস্থ্যকর ও কম ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়াম।
- অ্যাটকিন্স ডায়েটের মতো কম কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের উপর মনোযোগ দিন, হাইড্রেটেড থাকুন এবং নিয়মিত খাবার সময় বজায় রাখুন।
- শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খেলাধূলা, এরোবিক্সের মতো নিয়মিত ব্যায়ামে নিজেকে লিপ্ত করুন।
- উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যোগা ও ধ্যান অনুশীলন করুন এবং সুষম ঘুমের সময়সূচি (6-8 ঘণ্টা) বজায় রাখুন।
- করটিসল এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য স্ট্রেস কমান।
- ময়দা, চিনিযুক্ত, প্রক্রিয়াজাত বা প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্য বেছে নিন। অনেকের ক্ষেত্রে গ্লুটেন-মুক্ত এবং ডেয়ারি-মুক্ত খাদ্য প্রদাহ কমাতে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
লাইফস্টাইল সংক্রান্ত এরকম আরও খবর পড়তে হলে চোখ রাখুন সংবাদ ভূমি ইন্ডিয়া ওয়েবসাইটে।