Benefits of Apple in Bengali: আমরা সকলেই জানি যে রোজ একটি আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু কখনো ভেবেছেন কি, এই সুস্বাদু ফলটি কেন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য এত উপকারী?
আপেলের অনন্য স্বাস্থ্যগুণের মূলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইটোকেমিক্যালে। এর মধ্যে রয়েছে কুয়েরসেটিন, ক্যাটেচিন, ফ্লোরিজিন, এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড। এই উপাদানগুলি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত ক্ষতিকারক ‘ফ্রি রেডিকেল’ তৈরি হয়। দূষিত বাতাস, ধূমপান, এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ফ্রি রেডিকেলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই ফ্রি রেডিকেল আমাদের কোষের ক্ষতি করে এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
নিয়মিত আপেল খাওয়ার মাধ্যমে আমরা ফ্রি রেডিকেলের বিরূদ্ধে লড়াই করতে পারি। আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল নিষ্ক্রিয় করতে সাহায্য করে। ফলে কোষের ক্ষতি রোধ হয় এবং শরীর সুস্থ থাকে।
আপেল এর উপকারিতা (Apple Health Benefits): প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার দশটি কারণ
1. আপেলে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে
একটি মাঝারি আকারের আপেলে প্রায় 4.5 গ্রাম ফাইবার থাকে। এই ফাইবার হজমের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করতে পারে। ফলে খাবার খাওয়ার পর পেট ভরা ভাব অনুভূত হয়, এবং অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করে।
2. হৃদযন্ত্রের রক্ষাকারী
নিয়মিত একটি মাঝারি আকারের আপেল খাওয়া রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এসকল উপাদান বিশেষ করে সুস্থ হৃদযন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। যখন সম্ভব, আপেল খোসাসহ খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ খোসায় থাকা ফাইবার ও পলিফেনল হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
3. পাকস্থলীর স্বাস্থ্যের উন্নতি
আপেলে পেকটিন নামক একটি ফাইবার থাকে, যা প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। প্রিবায়োটিক আমাদের অন্ত্রের সুস্বাস্থ্যের জন্য ভালো ব্যাকটেরিয়াদের খাদ্য সরবরাহ করে। এই ভালো ব্যাকটেরিয়া আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
4. শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আপেল খাওয়া শ্বাসযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়াতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যারা সপ্তাহে পাঁচটি বা তার বেশি আপেল খান তাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা উন্নত হয় এবং ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) এর ঝুঁকি কম থাকে। এর কারণ হতে পারে আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যেমন ফ্লাভোনয়েড এবং ভিটামিন সি-র জন্য।
5. মস্তিষ্কের রক্ষাকারী
2014 সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে আপেলে থাকা ফিসেটিন নামক একটি যৌগ অ্যালঝেইমার্স রোগ প্রতিরোধ করতে এবং স্মৃতিশক্তি হ্রাস থেকে রক্ষা করতে পারে। মাত্র দশ বছর আগে আবিষ্কৃত এই ফিসেটিন ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে বলে জানা গেছে। বর্তমানে এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধির ক্ষমতার জন্যও প্রশংসিত হচ্ছে।
6. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি
আপেলের খোসায় কুয়েরসেটিন নামক একটি প্লান্ট ফ্লাভোনয়েড থাকে। এটি আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
7. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
নিয়মিত আপেল খাওয়া ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস করতে পারে, যার ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর কারণ হল আপেলে থাকা পলিফেনল। এটি অগ্ন্যাশয়কে ইনসুলিন তৈরি করতে উৎসাহিত করে এবং শরীরের কোষগুলিকে শর্করা শোষণ করতে সহায়তা করে।
8. অ্যাজমা প্রতিরোধ
‘নিউট্রিশন জার্নাল’-এ প্রকাশিত একটি রিসার্চ আর্টিকেল অনুযায়ী আপেল খাওয়ার সাথে অ্যাজমার ঝুঁকি হ্রাস এবং ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধির মধ্যে সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন আপেলে থাকা ফাইটোকেমিক্যাল ফুসফুস ও শ্বাসনালীতে প্রদাহ-বিরোধী প্রভাব ফেলে, যার ফলে শ্বাসকষ্ট ও অ্যাজমার অন্যান্য লক্ষণ হ্রাস পায়।
9. হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি
আপেলে ফ্লোরিজিন নামে একটি পুষ্টি উপাদান থাকে যা হাড় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে রজঃনিবৃত্তির পর মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে এবং হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
10. কিছু ধরনের ক্যান্সারের প্রতিরোধ
বিভিন্ন পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে যে আপেল খেলে কোলোরেক্টাল ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার, এবং স্তন ক্যান্সারের মতো কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমতে পারে। এর সম্ভাব্য কারণ হল আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা প্রদাহ-বিরোধী এবং ক্যান্সার-বিরোধী বৈশিষ্ট্য প্রদান করে।
আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যান্সার রিসার্চ (এআইসিআর) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্রতিদিন 30 গ্রাম ফাইবার খাওয়ার পরামর্শ দেয়। তাদের মতে, প্রতিদিন 10 গ্রাম ফাইবার খাওয়া কোলোরেক্টাল ক্যান্সারের ঝুঁকি 7% কমাতে পারে।
FAQs
1. আপেল খাওয়ার অপকারিতা কি?
সাধারণত, আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যকর। তবে, অতিরিক্ত পরিমাণে অথবা নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক অবস্থায় খেলে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আপেলে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার থাকে, তাই অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে গ্যাস বা ডায়রিয়া হতে পারে। উল্লেখ্য যে, আপেলে প্রাকৃতিক শর্করা থাকে, তাই যথাযথ মুখের পরিচর্যা না করলে দাঁত ক্ষয়ের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। অবশেষে, ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম (আইবিএস) বা ফ্রুক্টোজ ম্যালাবসর্পশন (Fructose Malabsorption) সহ কিছু চিকিৎসা অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা আপেল খেলে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। সুতরাং, আপনার খাদ্য তালিকায় আপেল অন্তর্ভুক্ত করার সময় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের বিষয়গুলি বিবেচনা করা জরুরি।
2. রাতে আপেল খেলে কি হয়?
রাতে আপেল খেলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, হাই ব্লাড প্রেশার, ও কোলেস্টেরলের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
3. আপেল কোন ঋতুতে হয়?
সাধারণত শরৎকালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেই আপেলের মরশুম আসে। তবে, নিলগিরি অঞ্চলে এই ফল এপ্রিল থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত পাওয়া যায়।
লাইফস্টাইল সংক্রান্ত এরকম আরও খবর পড়তে চোখ রাখুন সংবাদ ভূমি ইন্ডিয়া ওয়েবসাইটে।
Darun lekha. Very informative.
important information
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।