ICMR Cancer Research: ক্রমাগত ক্লান্তি, অপ্রত্যাশিত ওজন হ্রাস, এবং ঘন ঘন প্রস্রাব – এগুলো ডায়াবেটিসের পরিচিত লক্ষণ। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) সতর্ক করেছে যে, টাইপ 2 ডায়াবেটিসের সাথে জরায়ু ক্যান্সারের একটি যোগসূত্র রয়েছে।
আইসিএমআর-এর গবেষণায় দেখা গেছে, টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মহিলাদের জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ বেশি। গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, ডায়াবেটিসে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি জরায়ুর ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি ও ছড়িয়ে পড়ার প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে পারে।
আইসিএমআর আরও জানায়, অতিরিক্ত ওজন শরীরে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। এর ফলে ডায়াবেটিসে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। দিল্লির সি কে বিড়লা হাসপাতালের ডাক্তার রাজীব গুপ্ত ব্যাখ্যা করেছেন যে, এই হরমোনের ভারসাম্যহীনতা জরায়ুতে ক্যান্সার কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও অবদান রাখতে পারে। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে যে মোটা হওয়ার কারণে শরীরে দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ হতে পারে। এই প্রদাহ ক্যান্সারের বিকাশের পরিবেশ তৈরি করে।
ডায়াবেটিস ও জরায়ু ক্যান্সারের মধ্যে এই মিলগুলি বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই জ্ঞান গবেষকদের রোগ প্রতিরোধের নতুন উপায় খুঁজে বের করতে এবং রোগীদের আরও উন্নত চিকিৎসা প্রদান করতে সহায়তা করবে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলেও, এটি একমাত্র কারণ নয়। দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস, যা প্রায়ই ডায়াবেটিসের সাথে দেখা যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে এবং অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে।
মোটা হওয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে কারণ এটি শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রদাহের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। বয়স বৃদ্ধি, এইচপিভি সংক্রমণ, ধূমপান, মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ – এগুলো সবই ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানোর গুরুত্বপূর্ণ কারণ।
জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের গুরুত্ব
দিল্লির সি কে বিড়লা হাসপাতালের বিখ্যাত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ প্রিয়াঙ্কা সুহাগ জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন।
ডাঃ সুহাগের মতে, জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।
- স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা: সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা জরুরি।
- সুষম খাদ্য গ্রহণ: ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য (whole grain) সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার উপর জোর দেওয়া উচিত।
- নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সহায়তা করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা: ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ মেনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- টিকা গ্রহণ: ক্যান্সার সম্পর্কিত টিকা ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা: উচ্চ রক্তচাপ জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, তাই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের সাথে খোলাখুলি কথা বলা জরুরি।
ডাঃ সুহাগ আরও উল্লেখ করেছেন যে, ডায়াবেটিস ও জরায়ু ক্যান্সারের মধ্যে সম্পর্ক বোঝা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার মাধ্যমে নারীরা নিজেদেরকে এই রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, জরায়ু ক্যান্সার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসা অনেক সহজ এবং কার্যকর হয়।
ডিসক্লেইমার: লেখায় দেওয়া তথ্য শুধুমাত্র সাধারণ জ্ঞানের জন্য। আপনার কোনো চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্যা থাকলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
লাইফস্টাইল সংক্রান্ত এরকম আরও খবর পড়তে চোখ রাখুন সংবাদ ভূমি ইন্ডিয়া ওয়েবসাইটে।